কলা গাছের বৈশিষ্ট্য?

পাবলিশঃ about 5 months ago
দেখেছেনঃ 268

কলা গাছের বৈশিষ্ট্য

কলা গাছ একটি বহুবর্ষজীবী ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ। এটি মালভেসি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। কলা গাছ বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ফল। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত ফসলের মধ্যে একটি।


কলা গাছের কাণ্ড

কলা গাছের কাণ্ড একটি ছদ্মকাণ্ড। এটি মাটির নিচের রাইজোম বা কন্দ থেকে উৎপন্ন হয়। ছদ্মকাণ্ডের গোড়ায় একটি গুড়ি থাকে। গুড়ি থেকে নতুন নতুন পাতা ও ফুলের মোচা গজায়। ছদ্মকাণ্ডের উপরের অংশ মসৃণ ও সবুজ বা লাল রঙের হয়।


কলা গাছের কাণ্ডের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল:

কাণ্ডের উচ্চতা: কলা গাছের কাণ্ড সাধারণত ১০ থেকে ২০ ফুট উঁচু হয়। তবে কিছু কলা গাছের কাণ্ড ৩০ ফুট পর্যন্ত উঁচু হতে পারে।

কাণ্ডের ব্যাস: কলা গাছের কাণ্ডের ব্যাস সাধারণত ৫ থেকে ১০ ইঞ্চি হয়। তবে কিছু কলা গাছের কাণ্ডের ব্যাস ২০ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে।

কাণ্ডের রঙ: কলা গাছের কাণ্ড সাধারণত সবুজ বা লাল রঙের হয়।


কলা গাছের পাতা

কলা গাছের পাতা বড়, লম্বা ও মসৃণ। পাতাগুলি পাতা কুঁড়ি থেকে একত্রে বের হয়। পাতাগুলি সাধারণত সবুজ রঙের হয়। তবে কিছু কলা গাছের পাতা লাল, হলুদ বা বাদামী রঙের হতে পারে।


কলা গাছের পাতার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল:

পাতার আকার: কলা গাছের পাতা সাধারণত ২ থেকে ৩ ফুট লম্বা এবং ১ থেকে ২ ফুট চওড়া হয়। তবে কিছু কলা গাছের পাতা ৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।

পাতার রঙ: কলা গাছের পাতা সাধারণত সবুজ রঙের হয়। তবে কিছু কলা গাছের পাতা লাল, হলুদ বা বাদামী রঙের হতে পারে।

পাতার প্রান্ত: কলা গাছের পাতা সরু ও মসৃণ। পাতাগুলির প্রান্তগুলি সোজা বা ঢেউ খেলানো হতে পারে।


কলা গাছের ফুল

কলা গাছের ফুল ছোট, সাদা রঙের হয়। ফুলগুলি ছদ্মকাণ্ডের মাথায় একটি ছোট মোচায় জন্মায়। মোচা থেকে ফুল ফোটে। ফুল থেকে কলা ধরে।


কলা গাছের ফুলের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল:

ফুলের আকার: কলা গাছের ফুল সাধারণত ১ থেকে ২ ইঞ্চি লম্বা হয়।

ফুলের রঙ: কলা গাছের ফুল সাদা রঙের হয়।

ফুলের গঠন: কলা গাছের ফুল একটি ছোট মোচায় থাকে। মোচায় অনেকগুলি ফুল থাকে।


কলা গাছের ফল

কলা গাছের ফল একটি ডিম্বাকৃতি বা নলাকার হয়। ফলগুলি সাধারণত হলুদ রঙের হয়। ফলগুলিতে অনেকগুলি বীজ থাকে।


কলা গাছের ফলের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল:

ফলের আকার: কলা গাছের ফল সাধারণত ৪ থেকে ৬ ইঞ্চি লম্বা হয়। তবে কিছু কলা গাছের ফল ১২ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।

ফলের রঙ: কলা গাছের ফল সাধারণত হলুদ রঙের হয়। তবে কিছু কলা গাছের ফল সবুজ, লাল বা বাদামী রঙের হতে পারে।

ফলের স্বাদ: কলা গাছের ফলের স্বাদ মিষ্টি, টক বা মিষ্টি-টক হতে পারে।


কলা গাছের প্রকার

কলা গাছের অনেক প্রকার রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি প্রধান প্রকার হল:


চাঁপা কলা: চাঁপা কলা বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় কলা জাতের মধ্যে একটি। এটি একটি মিষ্টি স্বাদের কলা। চাঁপা কলার ফল সাধারণত ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি লম্বা হয়। ফলের রঙ হলুদ হয়। ফলের স্বাদ মিষ্টি হয়।


অমৃতসাগর কলা: অমৃতসাগর কলা একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর কলা জাতের মধ্যে একটি। এটিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ রয়েছে। অমৃতসাগর কলার ফল সাধারণত ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি লম্বা হয়। ফলের রঙ হলুদ হয়। ফলের স্বাদ মিষ্টি হয়।


সবরি কলা: সবরি কলা একটি মিষ্টি ও রসালো কলা জাতের মধ্যে একটি। এটি একটি সুস্বাদু ফল হিসেবে খাওয়া হয়। সবরি কলার ফল সাধারণত ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি লম্বা হয়। ফলের রঙ হলুদ হয়। ফলের স্বাদ মিষ্টি হয়।


কাঁচকলা: কাঁচকলা একটি সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। এটিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ রয়েছে। কাঁচকলার ফল সাধারণত সবুজ রঙের হয়। ফলের স্বাদ টক বা মিষ্টি-টক হতে পারে।


বিচি কলা: বিচি কলা একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর কলা জাতের মধ্যে একটি। এতে প্রচুর পরিমাণে শর্করা, ভিটামিন ও খনিজ রয়েছে। বিচি কলার ফল সাধারণত ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি লম্বা হয়। ফলের রঙ হলুদ হয়। ফলের স্বাদ মিষ্টি হয়।


কলা গাছের আয়ু

কলা গাছ সাধারণত একবার ফল দিয়ে মারা যায়। তবে কিছু কলা গাছ দুই বা তিনবার ফল দিতে পারে। কলা গাছের জীবনকাল সাধারণত ২ থেকে ৩ বছর।


কলা গাছের গুরুত্ব

কলা গাছ একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত ফসলের মধ্যে একটি। কলা গাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য, ঔষধ ও অন্যান্য উপকরণ পাওয়া যায়। তাই কলা গাছ একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও সামাজিক সম্পদ।


কলা গাছের ব্যবহার

কলা গাছের বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। কলা গাছের ফল খাওয়া হয়। কলা গাছের পাতা থালা, বাটি, মোড়ক ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। কলা গাছের কাণ্ড থেকে কাঠ তৈরি হয়। কলা গাছের কন্দ থেকে ওষুধ তৈরি হয়।


কলা গাছের চাষ

কলা গাছ চাষ করতে হলে উর্বর ও জল নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত মাটি প্রয়োজন। কলা গাছের চারা রোপণের সময় প্রতি গর্তে ৬ কেজি গোবর, ৫০০ গ্রাম খৈল, ১২৫ গ্রাম ইউরিয়া, ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ১০০ গ্রাম এমপি, ১০০ গ্রাম জিপসাম, ১০ গ্রাম জিংক এবং ৫ গ্রাম বরিক এসিড প্রয়োগ করতে হয়। কলা গাছের চারা রোপণের পর প্রতি ১৫-২০ দিন পর পর সেচ দিতে হয়। কলা গাছের প্রধান রোগ হল পানামা রোগ, বানচিটপ ভাইরাস, সিগাটোকা এবং কলার দাগ রোগ। এই রোগ প্রতিরোধে আক্রান্ত গাছ গোড়াসহ উঠিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হয়।


কলা গাছের যত্ন

কলা গাছের যত্ন নিতে হলে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি লক্ষ্য রাখতে হবে:

  • মাটি: কলা গাছ চাষ করতে হলে উর্বর ও জল নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত মাটি প্রয়োজন।
  • সার: কলা গাছের চারা রোপণের পর প্রতি ১৫-২০ দিন পর পর সেচ দিতে হয়।
  • সেচ: কলা গাছের চারা রোপণের পর প্রতি ১৫-২০ দিন পর পর সেচ দিতে হয়।
  • রোগ ও পোকামাকড় দমন: কলা গাছের প্রধান রোগ হল পানামা রোগ, বানচিটপ ভাইরাস, সিগাটোকা

কলা গাছ: একটি পরিচিত ও গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল সম্পর্কিত অন্যান্য প্রশ্ন সমূহ

কলা গাছের বৈশিষ্ট্য?